যাকাত: ইসলামের আর্থিক ইবাদত
যাকাত ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের একটি। এটি একটি ফরজ ইবাদত এবং সমাজের ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে অর্থনৈতিক ভারসাম্য সৃষ্টি করার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায়। কুরআন ও হাদীসে যাকাত আদায়ের গুরুত্ব অত্যন্ত স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
যাকাতের অর্থ
আরবি “যাকাত” শব্দের অর্থ — পরিশুদ্ধি, বৃদ্ধি ও পবিত্রতা। ধন-সম্পদকে পরিশুদ্ধ করার জন্য আল্লাহ তা’আলা যাকাত ফরজ করেছেন।
যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত
১. মুসলমান হওয়া
২. প্রাপ্তবয়স্ক ও বিবেকবান হওয়া
৩. নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা (হিসাব অনুযায়ী)
৪. সম্পদ এক বছর পর্যন্ত নিজের মালিকানায় থাকা
৫. সম্পদে অতিরিক্ততা থাকা (চলতি খরচ বাদে)
যাকাতের হার
- স্বর্ণ: ৭.৫ তোলা বা তার বেশি হলে — ২.৫%
- রৌপ্য: ৫২.৫ তোলা বা তার বেশি হলে — ২.৫%
- টাকা বা সম্পদ: নেসাব পরিমাণ হলে — ২.৫%
যাকাত কাকে দেওয়া যায়?
কুরআনের আলোকে (সূরা তাওবা: ৬০) — যাকাতের হকদার আট শ্রেণির মানুষ:
১. ফকির
২. মিসকিন
৩. যাকাত আদায়ের জন্য নিয়োজিত কর্মচারী
৪. ইসলাম গ্রহণে সহায়তা প্রয়োজন এমন ব্যক্তি
৫. বন্দী মুক্তির জন্য
৬. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি
৭. আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়
৮. মুসাফির
হাদীসে যাকাতের গুরুত্ব
রাসূল (সা.) বলেন:
“যে ব্যক্তি স্বর্ণ ও রূপার যাকাত আদায় করে না, কিয়ামতের দিন তা আগুনে গলিয়ে তার শরীর দগ্ধ করা হবে।”
(সহীহ মুসলিম: ৯৮৭)
আরও বলেন:
“তোমরা তোমাদের সম্পদকে যাকাত দিয়ে সংরক্ষণ কর।”
(তাবারানি)
যাকাতের উপকারিতা
- গরিবদের সাহায্য ও দুঃখ লাঘব
- ধন-সম্পদে বরকত আসে
- হৃদয়ে দয়া ও সহানুভূতি সৃষ্টি হয়
- সামাজিক বৈষম্য দূর হয়
- সম্পদ পরিশুদ্ধ হয় এবং দুনিয়া-আখেরাতে লাভবান হওয়া যায়
উপসংহার
যাকাত শুধু একটি দান নয়, বরং এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে ধনীদের প্রতি দরিদ্রদের হক। যাকাত আদায় করলে যেমন সম্পদ পবিত্র হয়, তেমনি সমাজে শান্তি, সহানুভূতি ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ঘটে। তাই যাকাত সময়মতো ও সঠিকভাবে আদায় করা প্রতিটি সামর্থ্যবান মুসলমানের দায়িত্ব।